চার সন্তানের বাবা এলিরান মিজরাহি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। গত বছর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাকে গাজায় পাঠানো হয়। গাজায় যুদ্ধ চললেও সেখান থেকে তাকে ইসরায়েলে ফেরত আনা হয়। কিন্তু তত দিনে একজন পুরো অন্য মানুষে পরিণত হয়ে যান তিনি।
তার পরিবারের ভাষ্য, গাজায় যুদ্ধ করতে গিয়ে এলিরান যা দেখেছিলেন, তাতে মানসিকভাবে বড় আঘাত পান। সেখান থেকে ফেরার পর চরম অবসাদে ভুগছিলেন। এর ফল মোটেও ভালো হয়নি। পুনরায় গাজায় পাঠানোর আগে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এলিরানের মা জেনি মিজরাহি বলেন, সে গাজা ছেড়েছিল, তবে গাজা তাকে ছাড়েনি। সেই অবসাদেই আমার ছেলেটা মারা গেল।
এলিরান যে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তার নাম ‘পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’ (পিটিএসডি)। গাজা থেকে ফেরার পর ইসরায়েলের হাজার হাজার সেনা পিটিএসডিসহ নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তবে তাদের কতজন আত্মহত্যা করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের এর কিছুটা চিত্র পাওয়া যায়। গাজা যুদ্ধ থেকে ফেরা এক–তৃতীয়াংশ ইসরায়েলি সেনাই মানসিক স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। গত আগস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতি মাসে এক হাজারের বেশি আহত সেনাসদস্যকে চিকিৎসার জন্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের ৩৫ শতাংশ নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিযোগ করেছেন। এ চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১৪ হাজার ইসরায়েলি সেনাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্যের বরাতে সংবাদমাধ্যম হারেৎজ বলছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১১ মে পর্যন্ত ১০ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলে বছরে পাঁচ শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়া ছয় হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ইসরায়েলি সেনাদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আত্মহত্যা। সে বছরেই অন্তত ১১ জন সেনা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন চিকিৎসক সিএনএনকে জানান, গাজার পর এখন অনেক সেনাকে লেবাননে পাঠানো হতে পারে, এই ভয় পাচ্ছেন তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর বহু সেনাসদস্য এখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারকে বিশ্বাস করেন না।