মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বিচারিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একইসঙ্গে আদালত তার কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে।
শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে আইসিসি এই নিন্দা জানায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইসিসি তার কর্মকর্তাদের ওপর (আমেরিকা) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এবং আদালতের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারিক কাজের ক্ষতি করার চেষ্টা করার জন্য (মার্কিন) নির্বাহী আদেশ জারির নিন্দা জানাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এর কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে নৃশংসতার শিকার লাখ লাখ নিরীহ ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার সরবরাহ ও আশা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাহী আদেশে বলা হয়, ‘আমেরিকা ও আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে অবৈধ এবং ভিত্তিহীন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।’
এই আদেশের আওতায় মার্কিন নাগরিক বা তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তে সহায়তাকারী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের ওপর আর্থিক এবং ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
ট্রাম্প এমন এক সময় আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন যখন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন।
আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন ট্রাম্পআইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন ট্রাম্প
গত নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। তবে আইসিসির অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। আইসিসি একই সময়ে হামাসের একজন কমান্ডারের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করেছিল।
এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাটরা আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের রিপাবলিকান-সমর্থিত প্রস্তাব আটকে দিয়েছিল। ওই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবাদে এনেছিল রিপাবলিকানরা। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাহী আদেশে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর ‘কথিত’ যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য আইসিসির তৎকালীন প্রধান প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা ও তাঁর এক সহযোগীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন
আইসিসি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আফগান তরুণী ও নারীদের অত্যাচারের দায়ে তালেবান নেতাদের এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১২৫টি। এই আদালত যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বা তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অপরাধের জন্য ব্যক্তিদের বিচার করতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ চারটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়।