Friday, March 14, 2025

অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার, যা বলছেন ব্যবসায়ীরা

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত গভীর সংকটে পড়েছে বলে মনে করেন তারা। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারায় নব্বই শতাংশ অর্ডার ভারতে চলে গেছে।

বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্রেতা এবং বাংলাদেশের পোশাক কারখানার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ‘নো এক্সিট’ এর পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে ক্রেতারা আবার ফিরতে পারেন। আমার অনেকগুলো অর্ডার ইন্ডিয়াতে প্লেস হয়ে গেছে। যে কাস্টমার আমার এখানেই কাজ করতো তার অর্ডারগুলো সে ইন্ডিয়াতে প্লেস করেছে শিপমেন্ট ও ডেলিভারি ইস্যুর কারণে। আমরা যদি পরিস্থিতি উন্নয়ন করতে পারি ক্রেতারা আবার ফিরে আসবে।

আরও পড়ুনঃ  জনতার এক শাখা থেকেই ২৭ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন সালমান

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ১২ থেকে ১৫ দিন প্রচুর ফ্যাক্টরি বন্ধ থেকেছে। একেবারে বন্ধ। কেউ কেউ আবার দুপুর পর্যন্ত চালাতে পেরেছে, এরপর পারেননি। এগুলো পুরাটাই ক্ষতি। আর এর চাইতে বড় ক্ষতি যেটা হচ্ছে সেটা হলো আমাদের যারা ক্রেতা তারা সরে যাচ্ছেন। তারা বলছেন যে আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি, বাংলাদেশকে লাগবে, সবই বলছেন, কিন্তু আমরাতো এটার বাস্তবতাটা জানি। বাস্তবতাটা হল অন্তত শতকরা ২৫-৩০ ভাগ অর্ডার ডিসেম্বরের মধ্যে সরে যাবে। এছাড়া অর্ডার বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তানে যাচ্ছে, এমনকি মিয়ানমারেও চলে যাচ্ছে।

রুবানা হক বলেন, যখন আপনি সাহস করে কোনো একটি সত্যি কথা বলতে যাবেন, নানা দিক থেকে নানাভাবে আপনার উপরে সবাই চড়াও হবে এবং বলবে যে এটা না বললেই পারতেন। কিন্তু এটা না বললেও কিন্তু ক্রেতারা জানেন যে ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হচ্ছে। কাজেই সহজভাবে স্বচ্ছভাবে আমাদের সমস্যাগুলো যদি আমরা তুলে ধরতে পারি এবং বোঝাতে পারি যে এর পেছনে আরও অনেক কিছু কাজ করছে তাহলে সবাই মিলে কিন্তু সমবেতভাবে একটা সমাধানের দিকে যাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ  হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার করছেন আ.লীগ নেতারা

আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক সংগঠনের নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আগের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের ফ্যাক্টরিতে যেমন সমস্যা হয়েছে, তেমনি পাঁচই আগস্টের পর সুযোগ পেয়ে শ্রমিকরাও নানা দাবি নিয়ে মাঠে নামে। এ আন্দোলনটা শুরু হয় নারী-পুরুষ সমহারে চাকরির দাবিতে। আপনারা জানেন যে ত্রিশটার উপরে দাবি আসছে। একেক কারখানার একেক দাবি।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার মনে করেন শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির নেপথ্যে বহিরাগত একটা প্রভাব কাজ করেছে।

আরও পড়ুনঃ  দেউলিয়া হওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় ১০ ব্যাংক : গভর্নর

তিনি বলেন, ঝুট ব্যবসা নিয়ে একটা সমস্যা- আগে যারা ছিল তাদের জায়গায় নতুন লোকজন এই ব্যবসা নিতে চায়। এছাড়া কিছু বহিরাগত সমস্যা ছিল। আর আন্তর্জাতিক কিছুটা চাপ থাকেই। যারা চায় আমাদের দেশ থেকে এই শিল্পটা আরেক দেশে যেন চলে যায়।

বাংলাদেশের বড় বড় পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে আশুলিয়া, সাভার এবং গাজীপুর এলাকায়। যেখানে সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। শ্রমিক অসন্তোষ এবং উত্তেজনার এক পর্যায়ে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ক্রমাগত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলা হলেও সেটি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয় সেটি স্পষ্ট।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ